মেহেরপুরঃ গেল কয়েক বছরে প্যাকেট জাত আম মেহেরপুর থেকে রপ্তানী হতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে রপ্তানি বন্ধ। দেশের অভ্যন্তরেও পরিবহণে নানা সমস্যা থাকায় খুব স্বল্প সংখ্যক আম রাজধানী ঢাকাসহ অন্য জেলায় রপ্তানী হচ্ছে। ফলে বিগত বছর গুলোতে আম চাষিরা যে দাম পেতো সেটা এখন আর পাচ্ছে না। তবে শিক্ষিত যুবকরা অনলাইনে ক্রয় বিক্রয় চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে লোকসানের হাত থেকে বাঁচবে জেলার চাষিরা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ মৌসুমে প্রায় ৯৮ ভাগ গাছেই মুকুল আসে। জেলার ৩ উপজেলায় ছোট বড় গাছ মিলে প্রায় ২ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। যা থেকে ৩৩ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপদ আম বাজারজাতকরণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ ও আম্রপালির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
জেলার হিমসাগর আম দেশের সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু হওয়ায় ইউরোপ মহাদেশে ক্রমেই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। করোনার কারণে এবছরে বিদেশে আম রপ্তানি করা যায়নি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলেও মেহেরপুরের হিমসাগর আমের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। ফলে হিমসাগর আমের মাধ্যমে মেহেরপুর আমের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে চিহিৃত হচ্ছে। তবে এটিকে ধরে রাখতে হলে সঠিক সময় আম বাজারজাত করতে হবে বলে জানান আম চাষিরা।
চিতলা গ্রামের আম চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একটি বাগানের আম আগেই বিক্রয় হয়েছিল। পরের বাগানের আম গুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে বাইরে বিক্রয় করছে। তাছাড়াও স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করছে। চলতি মৌসুমে প্রচুর আম ধরেছিল গাছে। তাছাড়া দামেও আমরা খুশি। প্রতি মন আমরা ১৫র্শ টাকা থেকে শুরু ১৭র্শ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করছি।
অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রেতা সালাউদ্দীন জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে অনলাইনের ই-কর্মাসের চাহিদা বেড়েছে। অনলাইনে মানুষ এখন বেশি আশস্বত হয়েছে। বাইরে গিয়ে আম কিনতে গিয়ে যে ভোগান্তি হয় এবং স্বাদেও সমস্যা দেখা দেয়। সেক্রেত্রে আমাদের নিকট থেকে নিশ্চিত ভালো মানের আম বাড়িতে বসে কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই পায়। যার ফলে আমাদের প্রতিদিন বিক্রি বাড়ছে আমের। আমরা এখন প্রতিদিন ৩০ মন করে আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠায়। এতে কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা করে কুরিয়ার সার্ভিস খরচ হলেও খুশি ক্রেতারা।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম সাহাব উদ্দীন জানান, চলতি মৌসুমে গাছে প্রচুর গুটি আসে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে আমের আকার একটু ছোট হয়েছে। যদিও স্বাদ ও মানে ভালো রয়েছে। গত বছরের আমফান ঝরে আম চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর অনেকের আম গাছে থাকলেও সে বছর তেমন স্বাদ ছিলো না। চলতি মৌসুমে আমের বাগান মালিকরা ভালো দামে বাড়িতে বসেই আম বিক্রি করতে পারছে। স্থানীয় লোকজনরাই অনলাইনের মাধ্যমে আবার এলাকার অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আম ক্রয় করে বিভিন্ন জেলায় ভালো দামে বিক্রয় করছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান মেহেরপুরে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আঁটি, বোম্বাই ও হিমসাগর আম সংগ্রহের কাজ। ২৫ মে গোপালভোগ, ২৮ মে ল্যাংড়া ও ৫ জুন থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত হাইব্রিড জাতের আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। যা থেকে ৩৩ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। মেহেরপুর জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। ভোক্তাদের কাছ নিরাপদ আম পৌঁছে দেবার লক্ষে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।